সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
সারা বাংলার জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্কয়ার হাসপাতালে মারা গেছেন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন আইয়ুব বাচ্চুর ঘনিষ্ঠজন ও এলআরবি’র সদস্য শামীম। তার মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর বহুদিনের ঘনিষ্ঠ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মইনুদ্দিন রাশেদ জানিয়েছেন তার সহকারী সকালে মগবাজারের বাসায় গিয়ে তাকে সকালে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এর পর তারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তার মৃত্যুর কারণ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়নি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ১৬ অক্টোবর রাতে রংপুরে একটি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাচ্চু। বুধবার রাত থেকেই তিন অস্বস্তি বোধ করছিলেন। সকাল ৮টার দিকে বাসা থেকে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হন স্বজন ও রাশেদ। তড়িঘড়ি তাকে স্কয়ার হাসপাতালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আনুমানিক সকাল ৯টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, দেশের তরুণদের রক গানের স্বাদ চিনিয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি এই শিল্পী দীর্ঘ চার দশক ধরে সুরের আলো ছড়িয়ে গেছেন। এছাড়া গিটারের ছয় তারেও জয় করেছেন উপমহাদেশ। আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
গুণী এই শিল্পীর জন্মদিন ১৬ আগস্ট ১৯৬২ সাল। এই দিনে চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ছোটবেলা থেকেই গিটারের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। তবে ব্যান্ডের সঙ্গে তার যাত্রা শুরু ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে। তার কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি ‘সোলস’ ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’ প্রকাশ হয়েছিলো ১৯৮৬ সালে। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি।
আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৮) দিয়ে। এরপর ১৯৯১ সালে বাচ্চু ‘এলআরবি’ ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো।
১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। ‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ পুরো দেশে আলোড়ন তৈরি করে। এর মধ্যে ‘চলো বদলে যাই’ গানটি বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়। সেটিও সাফল্য পায়। আইয়ুব বাচ্চুর সর্বশেষ তথা ১০ম অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ প্রকাশ হয় ২০১৫ সালে।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া কিছু গান এখনো সমানভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘এক আকাশের তারা তুই’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’ উল্লেখযোগ্য।
শুধু অডিও গানে নয়, প্লেব্যাকেও তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তার গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় গান। এছাড়া ‘আম্মাজান’ সিনেমার শিরোনাম গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।